নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারীদের দাবির যৌক্তিকতা মেনে নেয়ার পরও এই আন্দোলন অব্যাহত থাকায় এর উদ্দেশ্য নিয়ে সরকারের মধ্যে ‘সন্দেহ তৈরি হচ্ছে’ – বলছেন বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম দাবি করেছেন, সরকার যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সাথে দাবিগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
শুক্রবারও স্কুল কলেজে শিক্ষার্থীরা ঢাকার কয়েকটি জায়গায় অবস্থান নিয়েছিলেন।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের এ ভাবে রাস্তায় নেমে আসা স্বত:স্ফূর্তভাবেই শুরু হয়েছিল – এটা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও সিনিয়র নেতাদের অনেকে মনে করেন।
কিন্তু এখন এই আন্দোলন দীর্ঘায়িত হওয়ায় সরকার এবং আওয়ামী লীগে সেই সন্দেহ তৈরি হচ্ছে যে এর পিছনে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে কি না।
তাদের সাথে অনানুষ্ঠিক আলাপে এমন ধারণাই পাওয়া যায়। তাঁরা বলছেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর যৌক্তিকতা সরকার মেনে নেয়ার পরও কেন আন্দোলন অব্যাহত রাখা হচ্ছে?
প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে বিষয়টি দেখা হচ্ছে এবং সে ব্যাপারে সবার আস্থা রাখা উচিত।
“সরকারের কথায় যদি কেউ আশ্বস্ত না হয়, সর্বোচ্চ মহলের কথায় যদি কেউ আশ্বস্ত না হয়,তাহলে কি করা যাবে? এটা কি লিখিত মুচলেকা দিতে হবে? সরকার কি তাই দেয় কখনও? আমাদের কথা তো বিশ্বাস করতে হবে, আস্থা রাখতে হবে” – বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেছেন, “যদি সরকারের আচরণ লক্ষ্য করেন, কতগুলো বিষয় আছে যেগুলো চট করে করা যায় না। কিন্তু এই ক্ষেত্রে খুব ক্ষিপ্রতার সঙ্গে দ্রুততম সময়ে কতগুলো কাজ করা যাবে।”
পরিস্থিতি নিয়ে সড়ক পরিবহন এবং সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে যোগাযোগ করা হলে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে তিনি শুক্রবার তাদের দলীয় এক অনুষ্ঠানে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে বিএনপি ও সাম্প্রদায়িক শক্তি ব্যর্থ হয়ে এখন শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে উসকে দিতে চাইছে।
এদিকে বিরোধীদল বিএনপিও এই আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে বলছে, সরকারের ব্যর্থতার কারণে এ ধরণের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছে।
শিক্ষা বিষয়ক একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার রাশেদা কে চৌধুরী মনে করেন, কোনো স্বতস্ফূর্ত আন্দোলন দীর্ঘসময় চালানো হলে তখন তা নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়।
“আমাদের দেশে দু:খজনক, যে কোনো স্বতস্ফূর্ত আন্দোলনকে, নন-পার্টিজান আন্দোলনকে রাজনীতিকীকরণের একটা প্রয়াস আমরা সব সময় লক্ষ্য করেছি। এটা সব দলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। এ কারণে যেটা হয়েছে যে, মানুষের মধ্যে মধ্যেও এক ধরণের অনাস্থা যে, শেষপর্যন্ত সরকার যে কথা বলছে, তা আসলে বাস্তবায়ন হবে কিনা?”
একইসাথে রাশেদা কে চৌধুরী বলছেন, শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন মানুষের যেমন সমর্থন পেয়েছে, তেমনি সরকারকেও নাড়া দিয়েছে। ফলে সরকার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তা বাস্তবায়ন করতে হবে বলে তিনি মনে করেন।
তিনি বলছিলেন, “যতটুকু আমার বুদ্ধি-বিবেচনায় বুঝেছি বা ভিতরের খবর যতটুকু পেয়েছি, তাতে মনে হয়, এটা সরকারকে যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে। সেখানের সরকারের ভিতরে বিবেকও কাজ করেছে এবং এক ধরণের সহমর্মিতাও রয়েছে।”
“সরকার কিন্তু এটা স্বীকার করে নিয়েছে যে এটা যৌক্তিক তাদের আন্দোলনটা। রাজনৈতিক সদিচ্ছাটা আমরা দেখতে পাচ্ছি। এখন এই সদিচ্ছার বাস্তবায়ন কতটুকু হবে, সেটা সময় বলবে।”
প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, পরিবহন খাতের সমস্য দীর্ঘদিনের পুরোনো। সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে অনেকদিনের ঝুলে থাকা আইন প্রণয়নেরও উদ্যোগ এখন নেয়া হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
তিনি প্রশ্ন রেখেছেন “কেন আগে এগুলো চিন্তা করা হয়নি? কেন আগে আইন করা হয়নি? কেন এখন এসে আওয়ামী লীগ সরকারকে এই আইন করতে হচ্ছে?
মি: ইমাম বলেছেন, “অতীতে এরশাদ সরকারের সময়ে আইন করার চেষ্টা করা হয়েছিল, তখন প্রথমে মৃত্যুদন্ড, সেটা হলো না। তারপর যাবজ্জীবন কারাদন্ড, সেটাও হলো না। অনেক কিছু করতে করতে এমন ঢিলেঢালা হয়ে গেলো যে, সড়কের এই মালিক আর শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য বেড়ে গেলো।”
“এক নম্বরে ডিসিপ্লিনের অভাব এবং এটি সুস্থ না। এরা অসুস্থ প্রতিযোগিতা করে রাস্তায়। এগুলোতো বন্ধ করতেই হবে।”
বিশ্লেষকদের অনেকে বলেছেন, স্বত:স্ফূর্ত আন্দোলন নিয়ে যখন রাজনীতি চলে, তখন দাবিগুলো শেষ পর্যন্ত সরকার বাস্তবায়ন করবে কিনা, সে ব্যাপারে আস্থার অভাব থাকতে পারে।